সুস্থ জীবন সুস্থ মন, গড়ে তুলি হতাশাবিহীন ভুবন

লেখক: অপরিচিত | সঙ্কলনের দিন: জানুয়ারী 08, 2018

পড়ালেখায় অমনোযোগীতা, কোন কিছুতেই মন বসে না, সব সময় মন খারাপ লাগে, কারো সাথেই কথা বলতে ইচ্ছা করে না,  সারাদিন বিছানায় পড়ে থাকা, আত্মবিশ্বাসের  অভাব, সিদ্ধান্তহীনতা, হীনমন্যতা, অতিরিক্ত রাগ হওয়া, মনে নানা রকম নেতিবাচক চিন্তা আসা প্রভৃতি আর এই সব লক্ষণ যদি তোমার সাথে মিলে যায় তবে তুমি হতাশায় ভুগছো, আর এই লেখাটি তোমার জন্যই।    

এই সমস্যা থেকে বের হওয়ার কিছু উপায় তোমাদের জন্য তুলে ধরা হলঃ

১। ঔষধ সেবন এবং কাউন্সেলিং  

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ তুমি হতাশায় ভুগছো কিনা তা পরীক্ষা করে দেখবেন। যদি তুমি হতাশায় ভুগে থাকো তবে ডাক্তারের পরামর্শ মতো ঔষধ সেবন করতে হবে এবং কাউন্সেলিং করতে হবে। এক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের কাছে বিহেভিয়ার থেরাপি নিতে হবে। বিহেভিয়ার থেরাপি এর মানে হলো তুমি তোমার কাউন্সিলরের কাছে তোমার সমস্যা, দুশ্চিন্তাগুলো তুলে ধরবে আর  তিনি আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায় তা তুলে ধরবেন। রোগের উপর নির্ভর করে বিহেভিয়ার থেরাপি অনেক দিন চলতে পারে

২। নিজের ভালো লাগাকে মূল্য দিতে হবে

তোমার কী করতে ভালো লাগে, গান শুনতে, বই পড়তে নাকি ঘুরতে? চেষ্টা করো সেসব লিস্ট করতে এবং লিস্ট অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করো। সৃষ্টিশীল কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত করো যেমনঃ ছবি আঁকা, বাগান করা, লেখা-লিখি, স্কুল-কলেজের স্কাউটিং কার্যকর্মে যুক্ত হওয়া ইত্যাদি।

৩। ডায়েরি লেখা

প্রথমে তুমি তোমার সব সমস্যা, ভাবনা-চিন্তা, মনের সব কথা, কষ্টের স্মৃতি একটি ডায়েরিতে লিখবে এবং এগুলো থেকে তুমি কীভাবে বের হতে চাও সেই বিষয়েও সমাধান মূলক কথা লিখবে। তোমার আজকের ব্যর্থতার ভারকে পাত্তা না দিয়ে অতীতে তুমি যে সাফল্য পেয়েছিলে তা মনে করবে আর তাতেই ভবিষ্যতের সাফল্যের বীজ বপনের পথে চলবে।

৪। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম

 টিনেজারদের জন্য ঘুম খুব দরকারি। তোমাকে ৮-১০ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। যারা হতাশায় ভোগে তাদের অনেকেই বেশি ঘুমায় কিংবা কম ঘুমায়। অনেকে আবার সারাদিন বিছানায় পড়ে থাকে। আর যদি তোমার এই অভ্যাস থেকে থাকে তবে তোমাকে এই চক্র থেকে বের হতে হবে আর এক্ষেত্রে তুমি যা করতে পার তা হল, প্রতিদিন রাতে রুটিন করে এক সময়ে ঘুমাতে যাবে এবং সকালে এক সময়ে ঘুম থেকে উঠবে ঘুমানোর জায়গা যেন আরামদায়ক, শান্ত, অন্ধকার হয় সেদিকে খেয়াল রাখবে ঘুমানোর সময় ল্যাপটপ, আইফোন, ট্যাব ইত্যাদি নিয়ে অলস সময় কাটাবে না দিনে না ঘুমিয়ে রাতেই একবারে ঘুমাবে এইভাবে কয়েক দিন নিয়ম মেনে চললে, একদিন দেখবে তোমার অভ্যাস হয়ে গেছে ঘুমের আর কোন সমস্যাই হচ্ছে না।   

৫। পুষ্টিকর খাবার খাওয়া

কথায় আছে, “স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।” আর বয়ঃসন্ধি কাল সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় শারীরিক-মানসিক পরিবর্তনগুলো খুব তাড়াতাড়ি হয়। হরমোনের দ্রুত পরিবর্তনের ফলে এসময় বেশি মাত্রায় চাপ ও হতাশা কাজ করে। আর এই সব চাপ ও হতাশা থেকে বাঁচতে প্রোটিন যুক্ত খাবার বেশি করে খাবে প্রোটিন যুক্ত খাবার মানসিক চাপ আর হতাশা থেকে মুক্ত হয়ে মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।   

৬। ব্যায়াম-মেডিটেশন করা

নিয়মিত ব্যায়াম-মেডিটেশন করলে দেখবে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে আর ব্যায়াম করলে শরীর ও মন সতেজ থাকে, বাড়তি চাপ ও হতাশা থেকে মুক্তি মেলে। নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে মস্তিষ্কে “এন্ডোরফিন নিঃসরণ হয়, যা দুশ্চিন্তা কমাতে ও মন-মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই দুশ্চিন্তা কিংবা মনের প্রফুল্লতা দু’টির জন্যই নিয়মিত ব্যায়াম করা হতে পারে চমৎকার একটি মাধ্যম। টিনেজ বয়সে নিয়মিত আধা ঘণ্টা করে ব্যায়াম করা উচিত। এই বয়সে জিমে না গিয়ে, সাধারন ভাবে যেসব ব্যায়াম করা যায় তা হলঃ নিয়মিত জগিং করা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো এবং মেডিটেশন করা ইত্যাদি।

৭। পরিবারের সাপোর্টে থাকা

তোমার পরিবারই তোমার নিরাপদ আশ্রয় স্থান। যেকোনো সমস্যার কথা, কষ্টের বিষয় যা তোমার অস্বস্তির কারণ, সব তুমি তোমার মা-বাবা, ভাইবোনদের কাছে শেয়ার করতে পারো তাদের স্নেহ-মায়ায়, সাপোর্টে তোমার সমস্যা গুলোর সমাধানও হয়ে যেতে পারে।   

৮। বন্ধু-বান্ধবের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা

তোমার অসুস্থতার ফলে তুমি হয়তো বন্ধু-বান্ধবদের সাথে তেমন একটা যোগাযোগ রাখছো না, কিন্তু ভুলেও তা করবে না। যারা তোমার ভালো বন্ধু তারা তোমার পাশে সব সময়ই থাকবে, যেকোনো পরিস্থিতিতে তাই সব সময় তাদের সাথে যোগাযোগ রাখবে, গল্প করবে, এক সাথে বেড়াতে যাবে।  

৯। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো

অনেক সময় অন্যের দুঃখ দেখে নিজের দুঃখ ভুলে থাকা যায়। দেখবে তোমার আশেপাশে  অনেক অসহায় মানুষ আছেন, তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালে, তাদের সাহায্য করলে যে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায় তার মূল্য সীমাহীন। তাদের কষ্টের কথা জানলে তখন তোমার নিজের কষ্টকে আর কষ্ট মনে হবে না।


< সকল পোষ্টে ফিরে চলুন